বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১২

শিরোনামহীন

বিষয়ঃ
 লিখেছেনঃ আনোয়ার হোসেইন ফার্মার
বই নিষিদ্ধের ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে,যেসব বইগুলো নিষিদ্ধের তালিকায় ছিলো বা এখনো রয়েছে সেসব বইগুলোর বেশীরভাগই প্রথাবিরোধী,নিদিষ্ট দর্শন বিরুদ্ধ ,কুসংস্কার বিরোধী,শাষক -শোষন বিরোধী,ধর্মীয় গোঁড়ামী বিরোধী ইত্যাদি!এবং বইগুলো নিষিদ্ধের একমাত্র কারণ ছিলো ক্ষমতাসীন মহলের ভীত নড়ে যাওয়ার ভয়!
বাঙলাদেশও এর বাইরে নয়!তবে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে বই নিষিদ্ধের তালিকায় আর কোন বই আছে কিনা আমার জানা নাই!যদিও ইতিহাস বিকৃ...তি ঘটেছে এমন বই বাঙলা সাহিত্যে ঢের বেশী!এক্ষেত্রে স্বার্থন্বেষি মহলের পাশাপাশি আনাড়ি লেখকের হাতেও ইতিহাসে সত্য-মিথ্যার সংযোজন,বিয়োজন ঘটেছে প্রায়!তাই প্রশ্ন জাগে ঐসব বইগুলোও নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন আছে কি ?কিংবা খুনি,ধর্ষক,রাজাকারদের স্বহস্তে লিখিত বইগুলোর মুল্যায়ন করা হবে কিভাবে?
আবার দেখা যায়,নিষিদ্ধের প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষন সবত্রই বিদ্যমান!সেক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বইও প্রসিদ্ধ হয় রাতারাতি!গ্রহণযোগ্যতাও পায় কিছুটা সহজে!

অন্যদিকে হুমায়ুন আহম্মেদ এদেশের পাঠক সমাজে ব্যাপক পরিচিত!এক শ্রেণীর পাঠকের কাছে তিনি উপন্যাসিক,কথা সাহিত্যিক,গল্পকার ইত্যাদি হলেও আরেক শ্রেণীর পাঠক তাকে অবহিত করেন অপন্যাসিক,কথিত সাহিত্যিক,পতিত সাহিত্যিক,বিক্রিত সাহিত্যিক ইত্যাদি বলে!সুতারাং তিনি যখন একটা বিষয়কে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছেন সেক্ষেত্রে দুপক্ষের সমর্থন-বিরোধীতাই ছিলো স্বাভাবিক!হুমায়ুন আহম্মেদের ব্যাপক পরিচিতির কারনে হয়েছেও তাই! এবং এভাবে তর্ক,বিতর্ক,যুক্তি-বিদ্যা-বুদ্ধি প্রয়োগে শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হওয়াই ছিলো স্বাভাবিক!
এবং এই সুযোগে ইতিহাস চর্চায় অনীহা একটি প্রজন্ম কিছুটা হলেও জানতো প্রকৃত ইতিহাস!বেরিয়ে আসতো থলের বিড়াল!কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে তরুণ প্রজন্ম পেয়ে যেতো সেই সাপও!যেটি জাতিকে দংশন করে যাচ্ছে ৪২টি বছর যাবত্‍!
কিন্তু আদালত সেসব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দিলো এক রায়ের মাধ্যমে!

বই নিষিদ্ধ করার বস্তু নয়!বই নিষিদ্ধ করার অর্থই হচ্ছে বইকে ভয় পাওয়া!বইয়ের কাটতি বাড়ানো!বইয়ের বক্তব্যের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলা!এসব বিবেচনায় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে বইটি নিষিদ্ধ করার দাবী কেউ তুলেওনি!
তাই প্রশ্ন জাগে বিজ্ঞ আদালত কি, 'খেয়াল করে নিষিদ্ধ করেছে দেয়াল'?

গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যাম,ব্লগ,ফেসবুক,পত্র পত্রিকায় এনিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছিলো!এবং উক্ত বিতর্ক ৭৫ এর কালো দেয়াল টপকে পোঁছে গিয়েছিলো,বায়ান্ন,সাতচল্লিশ,ব্রিটিশ শাষন কিংবা নয়াদিল্লি,ইসলামাবাদ হয়ে মার্কিন সম্রাজ্য পর্যন্ত!এবং সর্বত্রই হুমায়ুন ভক্তরা ছিলো কোনঠাঁসা!তাদের বেশীর ভাগই গা বাঁছাতে বার বার বলছিলো,"এটা স্রেফ উপন্যাস,এটা স্রেফ উপন্যাস,উপন্যাস সত্য হবে এমন কোন কথা নেই ইত্যাদি"!কিন্তু সচেতন মহলের নান্দনিক যুক্তি ও অকাট্য প্রমান উপস্থাপনায় অনেক হিমু ও মিসির আলীর প্রকৃত জ্ঞান ফিরেছিলো!তারা বাধ্য হয়েছিলো হুমায়ুন আহম্মেদ কে প্রতারক বলতে ! কে জানে,হয়তো এই বিতর্ক আরো কিছুদিন চললে হুমায়ুন আহম্মেদরা লেখালেখিই ছেড়ে দিতে হতো?
অথচ আজ সেই গুরত্বপূর্ণ বিতর্কের অবসান ঘটে গেলো!
তাই আবারও প্রশ্ন জাগে,আদালত আর কত রায় দিবে,মঙ্গল-বিরোধী ?
কিংবা আদালত যারা চালায় তাদের বোধ,জ্ঞান,বিদ্যা,বুদ্ধি,সচেতনতা,দেশপ্রেম কতটুকু?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন